প্রেমকাহিনীটা আমার নানা আর নানীর। এটাকে Love Story বলা ঠিক হবে কি না তা জানিনা, কারন এই Storyতে ২জনের Love নামক ব্যাপারটা তেমন দেখা যাবেনা, তবে Loveএর জন্যেই Storyটার জন্ম। প্রেমিক পুরুষটি আমার নানা [শাহ্ জাহান চৌধুরী, Not শাহজাহান]। নানা আর তার নওজোয়ান বাহিনীকে ভয় পেতনা এমন কেউ গ্রামে ছিলনা। ভয় পাবার কিছু জোরালো কারন ছিল, নানা জমিদার বাড়ির বড় ছেলে, আকারে ৬.২” ঐ অনুযায়ী স্বাস্থ্য, “হাত থাকতে মুখে কি” টাইপ চিন্তাধারা, আরও অনেক কিছু। নানার একটা ঘটনা বললেই নানার সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে, নানা তখন ছোট, কোন এক বর্ষায় ঠিক হল নৌবহর নিয়ে পার্টি করবে, বাজার করার একসময় খেয়াল করলেন, আলুর দোকানদার ওজনে ২-৩টা আলু কম দিয়েছে, আর পায় কে, দোকানীর পাল্লা দিয়েই মেরে তার হাত ভাঙ্গে, পরে নওজোয়ান গ্রুপ বেটার দোকান ভেঙ্গে দেয়। মোটামোটি এই ছিল আমার নানার দিনকাল।
নানী ছিলেন তালুকদার বাড়ীর কেয়ামত
তালুকদারের ছোট মেয়ে আয়শা। নানীর গায়ের রঙ কালো ছিল, আমার নানা কালো মেয়েদের কেন
জানি সহ্য করতেন না। ২জন একই মক্তবে পড়ার কারনে প্রায় প্রতিদিন নানার নানান
অত্যাচার নানী সহ্য করত। একদিন নানা নানীকে বলে সে যেন আর মক্তবে না আসে, নানী কথা
শুনেনি তাই পরেরদিন প্রায় সবার সামনেই নানা নানিকে খুব জোরে থাপ্পর মারে [অহিংসা
পরম ধর্ম, ঐ সময় আমি ছিলাম না বলে নানাকে কেউ ব্যাপারটা সম্পর্কে জানায় নি], ঐটা
দেখে মক্তবে অনেকেই হাসাহাসি করে, মক্তব শেষে নানা প্রায় সবকটাকে ধরে এনে নানীর
কাছে মাফ চাওয়ায়, ওরা হেসেছিল বলে। তারপরে নানী আর মক্তবে পড়তে আসেনি, বাড়িতেই
নাকি পড়ত।
তারপর বেশ কয়েকবছর কেটে যায়, তাদের আর
দেখা হয়নি। একদিন তালুকদার বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ আসে, কেয়ামত তালুকদারের বড় মেয়ের
বিয়েতে শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী [নানার বাবা] ও তার পরিবারের সবার দাওয়াত। নানার যাবার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরীর কথা অমান্য
করার সাহস নানারও ছিলনা। ঝামেলার শুরুটা বিয়ে বাড়িতে যাবার পরেই হয়। শুনেছি, যেই
মানুষটা কালো গরুর দুধ পর্যন্ত খেতে চাইতনা, সেই মানুষটার চোখ একটা কালো মেয়ের
চেহারাতে আটকে যায়, পুরো বিয়ে বাড়ি জুড়েই নানার চোখ আর নানা, নানীর পেছনেই ঘুর ঘুর
করে। নানার মৌন অত্যাচার সবে মাত্র শুরু হয়, নানার আর কোন কাজেই মন নেই, খাওয়া
দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে প্রায়। ঐদিকে নানাকে ছাড়া নওজোয়ান গ্রুপের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ
হবার পথে। নানার বন্ধুরাও নানাকে নিয়ে ঝামেলায় আছে। নানাকে এক এক দিন এক এক জায়গায়
পাওয়া যেত, যেদিন যেখান দিয়ে নানী আসা যাওয়া করত। নানীর সামনে নানা অনেকবার যায়,
কিছুই বলতে পারেনা, এগিয়ে আসে নানার বন্ধুরা। ঐ আমলে না ছিল Archie’s
Hallmark, না ছিল Cadbury,
Love candy, তাই বন্ধুদের আবুদ্ধি কুবুদ্ধি জাতের বিজাতীয়
পরিকল্পনা যেমন, আতা তোতা ময়না টিয়া সাথে
আলাভু টাইপের ছড়ায় [গ্রামের কাকে দিয়ে যেন করাতো] ভরা রুমাল পাঠাত। Refuse হবার পর বন্ধুদের উৎসাহে নানীর পছন্দের
ফল, আলতা, শারি আরও কত কি পাঠানো শুরু করল, তাতেও যখন কাজ হলনা তখন নানা তার
সর্বশেষ অব্যর্থ অস্ত্র ব্যাবহার করলেন। রক্ত দিয়ে চিঠি লিখা মনে হয় লাইলি মজনু worldwide
শুরু করে, তবে
আমাদের গ্রামে এই Trend নানা প্রথম চালু করে। তবে হিতে বিপরীত হল, এইসব ঘটনা তালুকদার সাহেবের
কানে পৌছাতে বেশীদিন লাগেনি, অন্য কেউ হলে তাকে কেয়ামত তালুকদার গ্রাম ছাড়া করাতো,
কিন্তু শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী বা তার ছেলের সাথে লাগতে যাওয়াটা বোকামি মনে করে তিনি
মেয়ের বিয়ে দেখতে লাগলেন এবং কিছুদিনের মাঝে বিয়ে ঠিকও করে ফেলেন।
এইখবর পাবার পর নানা অনেকটাই ক্ষিপ্ত হয়ে
উঠেন, যতই ঘারত্যাড়া বা রগচটা মানুষ বলি, নানা তখন প্রেমিক ছিলেন, তাই শেষ চেষ্টা
হিসেবে Emotional Blackmail in political angelএ চেষ্টা চালান। অনেক Rehearsal করে ঐদিন নানী বাড়ীর অন্দরমহলে ঢুকে পরেন,
তালুকদার সাহেব সাথে আরও অনেকেই ছিলনা, সবাই বজরা নিয়ে বিয়ের Shopping করতে গিয়েছিল, এখনকার মত তখন মেয়েরা তাদের
বিয়ের Shopping নিজে
যেত না, নানী বাড়িতেই ছিল, নানাকে প্রথমে দেখে অনেক ভয় পেলেও নানার চেহারায় কি যেন ছিল, যা দেখে
নানী কিছু বলেনি, নানা নানীর সামনে গিয়েই সব গুলিয়ে ফেলেছিলেন, তখন নানী মনে হয়
একজন যে নানাকে প্রথম বার শিশুর মত কাঁদতে দেখে, যখন নানা বুঝতে পারেন যে নানা
কাদছেন, নানা তখন সাথে সাথে নানীর সামনে থেকে সরে যান।
কি করা যায় সেটা নিয়েই ভাবছেন, এটা
নিশ্চিত ছিলেন, নানীকে ছাড়া কোনভাবেই নানার চলবে না, সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়।
কেয়ামত তালুকদার নানার মত Rough n Tough ছেলেকে নিজের মেয়ের জামাই বানাবে না,
নানীকে তার বাড়ি থেকে উঠিয়ে আনা বেপার না, তবে শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী নানার পীঠের
ছাল তুলে নেবেন, তার ভয়ে কিছু করাও যাচ্ছে না।
তখন নানার এক বন্ধু বুদ্ধি দিল, উঠাইয়া
নে, তুই বংশের একমাত্র ছেলে, তরে তো আর ফেলে দেবেনা। যে কথা সেই কাজ, নওজোয়ান
গ্রুপ ৩ভাগে ভাগ হল, এক গ্রুপের দায়িত্ব হল যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে
বুঝিয়ে না করে দেয়া, না মানলে মেরে মানানো। আরেক গ্রুপ নানার সাথে যাবে, ঐ গ্রুপের
একজন হাটে দেখেছে মেয়ের গায়ে হলুদের জন্যে কোন শাড়িটা কেনা হয়েছে, রাতের বেলা মেয়ে
উঠিয়ে নিতে সাহায্য হবে বলে, আরেক গ্রুপ বজরা রেডি করে অপেক্ষা করবে, নানীকে নিয়ে
এলে কিছুদিনের জন্যে হাওয়া হয়ে যাবে, পরিবেশ ঠাণ্ডা হলে ফিরে আসবে।
প্রথম গ্রুপ বের হবার সময় লোকসংখ্যা
বাড়িয়ে নিয়ে যায়, প্রথমে না বুঝলেও নানা পরে বুঝতে পারে কেন। ছেলের বাড়িতে গিয়ে
মারধর, পরে ছেলের বাবা, ভাই, চাচা, আর ছেলেকে বেধে হুমকি ধামকি দিয়ে বের হয়ে আসে,
তারপর কি মনে করে যেন গ্রুপটা ঐ বাড়িতেই থেকে যায়, কোন Risk নেয়া যাবেনা। কারন, খবর বাইরে ছড়ালেও
ঝামেলা, মেয়ে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত অরা সেখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।
ঐদিকে বজরা গ্রুপ রেডি, আর নানার Kidnaper
বাহিনি বাড়ীর
আশেপাশে ঘুরছে আর চিন্তা করছে কিভাবে কি করা যায়, তখনি যে শাড়ি কিনতে দেখেছে সে
বলল ওইত আয়শা[প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে
বের হয়েছিল, তখন Toilet বাড়ীর বাইরে বানাত]। চুপি চুপি ওরা এগিয়ে যায়, একজন নানীর মুখে কাপর
পেঁচিয়ে ধরে, আর নানা একটা বড় বস্তা নিয়েছিল, নানীকে ওইটার ভেতর ঢুকিয়েই লুঙ্গি
উঠাইয়া দউর, একজন মানুষ কাঁধে নিয়ে দৌড়ানো
নানার জন্যে কোন ব্যাপারই ছিলনা। অবশেষে সবাই বজরায় পৌছায়, আসল বিপদ শুরু হয় তখন।
বস্তা খোলার পর নানা ছাড়া আর কেউ বজরায় ছিলনা, নানী ভেবে রাতের অন্ধকারে যাকে
উঠিয়ে আনা হয়েছিল, ঐটা ছিল নানীর আম্মু। রাতের অন্ধকার, আর উত্তেজনা, ২টার জন্যে
এতকিছু খেয়াল করা হয়নি কারোরই। কি আর করা নানীর মাকে নিয়ে আবার বাড়ীর পথে হাটা
দিলেন নানা। তালুকদার বাড়িতে ততোক্ষণে হৈচৈ পরে গেছে, বাড়ীর বড় বউ নিখোঁজ, তাও
মেয়ের গায়ে হলুদের রাতে। সবাই বেরিয়ে গেছে খোজাখোঁজি করতে। নানীর বাড়ীর কাছে আসার পর অনেকেই নানার সাথে নানীর মাকে দেখেন, নানাকে দেখে আর কেউ কিছু বলেনি। বাড়িতে
যেয়ে নানীর মা মিসেস তালুকদার কেয়ামত তালুকদারকে সব জানায়, এবার তালুকদার সাহেব
তার রাগ Control করতে
পারেনাই। পরদিন সকালেই মেয়ে আর বউকে নিয়ে শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরীর বাড়িতে তার সাথে
দেখা করতে যান, তারপর তার ছেলের রাতের ঘটনা সব বলে বিচার চান, নানা তখনো
ঘুমাচ্ছেন, নানার বিরুদ্ধে বাড়িতে এসে কেউ Complain করবে তা হয়তবা নানা কখনো ভাবেননি।
চৌধুরী সাহেবের ডাকেই নানার ঘুম ভাঙ্গে, ঐ
রোমে ঢুকে যখন তালুকদার পরিবারকে দেখতে পান, তখনি নানা যা বুঝার বুঝে যান, চৌধুরী
সাহেব তার Image তালুকদারের
সামনে বজায় রাখার জন্যে অকথ্য ভাষায় অনেক বকাঝকা করেন আর বলেন নানার জন্যে নাকি
বংশে এই প্রথম এমন হল, একটি মেয়ের জীবন নষ্ট হল, তার বিয়ে ভেঙ্গে গেল,। তখন দেয়ালে
শুধু পীঠ না, Bodyর বাকি Parts গুলাও ঠেকে গেছে, তাই আর ভয় ভীতি না রেখে
নানা সরাসরি বলেন, আমি আয়শাকে বিয়ে করতে চাই, ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব
না। এ কথা শুনে শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী হুঙ্কার দিয়ে উঠেন, “ যে মেয়ে তোমাকে চায়না,
তাকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছ, আবার আমার সামনে এই কথা বল, আমি তোমাকে ত্যাজ্য করব
শাহ্ জাহান”
ঘরে পিনপতন স্তব্ধতা বিরাজমান। তখন নানী
বুঝতে পেরেছিলেন সিদ্ধান্ত বদল হবে না, কি মনে করে যেন নানী বললেন এই শাহ্
জাহানকে বিয়ে করতে তার কোন আপত্তি নেই, নানা অবাক হয়ে শুনছিলেন নানী কি বলল। সাথে
সাথে আগের চাইতে কিঞ্চিৎ জোরে তালুকদার সাহেব হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, এই ছেলেকে বিয়ে
করলে আমি তোকে ত্যাজ্য করব [পুরাই ফিল্মি]। পরে কেয়ামত তালুকদার যখন বুঝতে পারলেন,
মেয়ে তার সিদ্ধান্তে অনড়, তখন তালুকদার আর মিসেস তালুকদার মেয়েকে ফেলে রেখেই
বেড়িয়ে আসে। পরে শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী And মিসেস চৌধুরী with শাহ্ জাহান চৌধুরী, সবাই মিলে কেয়ামত তালুকদারের কাছে যায় আর বুঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু
তালুকদার তার কথা থেকে নড়ে না, মেয়েকে ত্যাজ্য করেন।
নানী তখন চৌধুরী বাড়িতেই ছিলেন, পরে নানার
বাবা তাদের বিয়ে দেন, বিয়েতে নানীর পরিবারের কেউ আসেনি। বিয়ের পর নানী যেন এই
বাড়িতে কোনকিছুর অভাব অথবা অবহেলা না পায় সে দিকটা অনেক খেয়াল রাখতেন, বিয়ের পর
নানা অনেক বদলে যান, জমিজমা দেখাশুনা শুরু করেন, বজরা নিয়ে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন
হাটে জেতেন, নওজোয়ান গ্রুপ শেষ হয়ে যায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘুরাফেরা কমিয়ে দেন,
এক কথায় পুরু সংসারী হয়ে উঠেন।
বিয়ের অনেকদিন পরেও নানীর সাথে তার
পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি [May b bcoz of কেয়ামত তালুকদার]। বিয়ের প্রায় পঁচিশ বছর
পর নানী তার বাবার বাড়ি যায়, যেদিন তার বাবা মারা যায়, নানীর ভাই তাকে নিতে আসে,
নানীর অনেক অনুরুধের পর নানাও নানীর সাথে বিয়ের পর প্রথমবার তার শশুর বাড়ি যান।
শেষ কথাঃ সেই ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত,
তাদের যতই দেখি ততই অবাক হই, এখনও নানা যদি বাসায় আসতে কোন কারনে একটু দেরি করে, নানীর
পায়চারী আর মোবাইল এর উপর অত্যাচার দেখার মত হয়, একই ভাবে, নানা দূরে কোথাও গেলে
কাজ না থাকলে প্রায় সারাদিন কিছুক্ষণ পর পর ফোনে কথা চালায়। মাঝে মাঝে খুনসুটি
তাদের মাঝেও চলে, তবে যাই চলে খারাপ চলে তা কেউ বলতে পারবেনা।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন