শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১১

আমার বন্ধু সবুজ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

সবুজ কাল থেকে বেজায় অসুস্থ, একটু পরপর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ঠান্ডা লেগে গলার অবস্থা এতোটাই খারাপ যে মুখ দিয়ে শব্দ করতে গেলেও চি চি আওয়াজ বের হয়।তার ছোট্ট চার বছরের মেয়ে নাইমা একটু পরপর তার কাছে এসে ফিক করে হাসি দিচ্ছে।এর কারণ সবুজের সারা মুখ ও নাক এমনই লালটু হয়ে আছে তাকে সহজেই একজন সার্কাসের জোকার হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যাবে।সকাল ১১ টা বাজতে চলেছে এবং এখনো নাস্তা খাওয়া হয়নি তার।আর সহ্য করতে না পেরে সবুজ গায়ে জামা দিয়ে নিচে গেলো দুটো পরোটা আর খাসীর পায়া কিনতে।সমস্যা হলো যখন নাইমা মুখ গম্ভীর করে বললো, “আমিও যাবো”।
সবুজ হাসিমুখে মেয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে বললো, “চল বেটি আজকে তোকেও খাসির পা খাওয়াবো”।

সবুজের বাসার পাশে বিখ্যাত Sibbir's মায়ের দোয়া ভাতের হোটেল অবস্থিত যার মালিক সিব্বির নিজেই।আজকে যখন সবুজ সিব্বিরের দোকানে গেলো তখন সিব্বির ঘোৎ ঘোৎ করছে।কারণ একটু আগেই তার হোটেলের এক বয় দুটো গ্লাস একসাথে ভেঙ্গে ফেলেছে।ভেঙ্গে ফেলেই তার কাজ শেষ হয়নাই, সিব্বিরের কাছে এসে বলেছে, “কাক্কা গেলাসগুলা কুফা ছিলো।যেইসব কাস্টোমাররে এই গেলাসে পানি দিছি ওগো হোগগলে টিপস না দিয়া ভাইগ্যা গেছে”।
সিব্বির চুপ করে বয়ের কথা শুনলেন এবং হাসিমুখে বললেন, “ঠিক আছে বাবা মন দিয়া কাজ কর”।
সিব্বিরের এত ভালো আচরণের কারণ আজকে শুক্রবার।সে জুম্মাবারে সবার সাথে মৃদু কন্ঠে, আদব লেহাজ রেখে কথা বলে।সবুজ যখন সিব্বিরের সামনে গেলো তখন সিব্বির তার সস খাওয়া দাত সব বাহির করে বলে, “মামণিরে নিয়া আসছেন এইজন্য অন্তর থেকে শুকরিয়া জানাই।মামণির লেইগ্যা হোটেল ফ্রি।আর আপনে আইজকা বাকির কথা মাথায় আইন্যা শরম দিয়েন না”।
সবুজ মৃদু হেসে বললো, “না আজকে আপনার আগের মাসের সব বিল দিয়ে দেবো।এখন আমার মেয়ের জন্য চমচম আর আমার জন্য পরোটা, খাসীর পায়া রেডি করেন”।

সিব্বিরের হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন সবুজ বাসায় যাচ্ছিলো তখন পথে সারমিনের সাথে দেখা।সবুজ যে বাসায় ভাড়া থাকে সারমিন সে বাসার বাড়িওয়ালার মেয়ে।বেচারা এই মেয়েটাকে খুব ভয় পায়।কারণ মেয়েটা তাকে দেখলেই এমন একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে কথা বলে সবুজ লজ্জায় মরে যায়।এবং মেয়ের মুখেরও কোন ব্যালেন্স নাই।উইদআউট ব্রেক, সে এমন এমন সব ভয়ংকর অপমানজনক কথা বলে সবুজকে, সবুজের মনে হয়, হে খোদা কেন এই সুন্দর দুনিয়াতে পাঠালে?
আজকে সারমিন বেশ সাজুগুজু করেছে এবং সবুজকে দেখে অমন বিরক্তি ভাবও প্রকাশ করলোনা।বরং হাসিমুখে বললো, “সবুজ ভাই আজকে আমার ডেট আছে বুঝলেন, কিন্তু সমস্যা হলো পকেটে টাকা নাই।খুবই লজ্জার মধ্যে আছি।দেখা গেলো, যার সাথে ডেট করতে গেলাম তার অর্থনৈতিক সমস্যা আছে।তখন তো আমি বিপদে পড়ে যাবো।আর আপনি তো জানেন আজকালকার ছেলেরা বেশিরভাগ আপনার মত বদলোক।পয়সাকড়ি পকেটে রাখেনা তাই না?”

সারমিনের অপমান সবুজ গায়ে মাখলোনা।মাত্র ইউনিতে থার্ড ইয়ারে পড়ে এই মেয়ে, এর কথা যদি গায়ে মাখে তাহলে তো সমস্যা।সে শুধুই গোবেচারা গাভীর মত হাম্বাহীন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সারমিন বললো, “ইয়ে মানে কাল তো দু তারিখ ছিলো।আপনি তো বেতন পেয়েই গেছেন, তাই ভাবছিলাম আপনার থেকে কিছু টাকা নিয়ে যাই।প্রতিবার ভাড়া দেয়ার সময়তো দুই একটাকা কমই দেন, সেগুলো জড়ো করলে পাচ-ছশো টাকা তো হবেই।ওইটাই নাহয় দেন।আল্লাহর কাছে আমি আর আমার ডেট পার্টনার দুহাত তুলে প্রার্থনা করবো”।
সবুজ আমতা আমতা কন্ঠে বললো, “আমি তো সবসময় এক তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করে দেই, আর কখনো একটা টাকাও কম দেইনা আর কি”।

সারমিন ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “ফকিন্নীর মত আচরণ করবেন না।সামান্য কিছু টাকা চেয়েছি।নাহয় ধার দিন।আছে তো”?
সবুজ ভদ্রলোকের মত পকেট থেকে একহাজার টাকার একটা নোট বের করে সারমিনের হাতে দিয়ে দিলো।এই মাসে তার হয়তো এজন্য বিরি অর্ধেক করে ফেলতে হবে।কিন্তু কিছু করার নাই।এই মেয়ের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে ধূমপান বন্ধ করে দিতেও রাজি আছে।
দুপুরে খাওয়ার আগ দিয়ে সারমিন সবুজের দরজায় ধাক্কা দিলো।সবুজ সারমিনকে দেখে হতভম্ব।তোতলিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি যাওনাই প্রেম করতে?”

সারমিন তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে বললো, “বদলোক আমি প্রেম করতে না ডেট করতে যাবার কথা বলেছিলাম।দুটা ডিফারেন্ট আছে।আর হঠাৎ করে কেন যেন মনে হচ্ছিলো আজকে আপনার বদমেয়েকে নিয়ে কোথাও যাওয়া দরকার।ওর চেহারা তো আপনি ফ্যাকাশে বানায় দিছেন ঘরে রাখতে রাখতে। নাইমার দিকে তাকিয়ে সারমিন চোখ নাচিয়ে বললো, কিরে বেটি যাবি নাকি?”
নাইমা দুহাত বাড়িয়ে সারমিনের কোলে উঠে বললো, “মামনি কোথায় যাবা?”
নাইমা সারমিনকে মামণি ডাকে, কেন ডাকে তা সবুজ বুঝেনা।যখন নিধি সবুজ ও তার মেয়েকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, তখন সারমিনের এইচ.এস.সি পরীক্ষা চলছে।সারমিন সব পড়াশোনা বাদ দিয়ে নাইমাকে নিজের মেয়ের মত মানুষ করেছে।এখনও করছে। সবুজ যখন অফিসে চলে যায় তখন সারমিন ও তার মা যখন যে বাসায় থাকে তার কাছে নাইমাকে দিয়ে সবুজ নিশ্চিন্তে অফিস করে।
সারমিন সবুজের হাতে হাজার টাকার নোটটা ধরিয়ে দিয়ে বললো, “আপনি ফকির গোছের মানুষ।আমি আমার হাতে এই টাকা নিয়ে তাই নষ্ট করলাম না।কিন্তু আজকে আমাকে আর নাইমাকে নিয়ে যখন বাহিরে ঘুরতে যাবেন তখন অবশ্যি এই পুরা টাকাটা খরচ করবেন।আমি তিনদিন ধরে প্ল্যান করে আসছি, আজকে কোথায় কোথায় যাবো, কোথায় কোথায় খাবো”।

সবুজ সারমিনের কথা কিছুই বুঝলোনা।তার না আজকে ডেট করতে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো।তাহলে এইসব ঘুরাঘুরির কথা চিন্তা কেন করবে তিন দিন ধরে?তবে অবশ্যই সে বোকার মত সারমিনকে একথা জিজ্ঞেস করলোনা।শুধু আমতা আমতা করে বললো, “আমার কি যেতেই হবে?” সারমিন বললো, “হ্যা যেতে হবে।আমরা দুই তরুণী তো একা একা কোথাও যেতে পারবোনা।আমাদের প্রটেক্ট করবে কে?”
নাইমার দিকে তাকিয়ে সারমিন বললো, “কথা ঠিক আছেনা বেটি?”
নাইমা কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ায়।

বিকাল চারটার দিকে তিনজনের দলটি ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে পৌছালো, আজকে এখানে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান আছে সারমিনের কিছু বন্ধুর।তার বন্ধুরা আজকে সন্ধ্যাবেলা মোম জ্বালিয়ে রবি ঠাকুরের প্রেমের গান গাইবে।সিড়ির উপর বসে সারমিন ও সাবুজ অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখতে লাগলো।নাইমা একটু সামনে সারমিনের বন্ধুদের কোলে কোলে ঘুরছে।সবুজকে চমকে দিয়ে সারমিন হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলো, “নিধি ভাবীকে এখনো মিস করেন?”

সবুজ কিছু বলেনা।চুপ করে থাকে।এমন ভাব করলো যেন সে কিছু শুনেনি।তার মনে পড়ে নিধিকে সে যেদিন বিয়ে করলো তার সমস্ত আত্না জুড়ে একটা ভয়ংকর আলোড়ন চলছিলো।কলেজ লাইফে এই মেয়েটাকে সে পাগলের মত ভালোবাসতো।আরেকজন এই মেয়েটাকেই ভালোবাসতো।তাদের আরেক ক্লাসমেট মানিক। মানিককে নিধি সংক্ষেপে বলতো গিত্তু[ওর height একটু কম ছিল বলে]। গিত্তুকে নিধি তার সমস্ত কিছু দিয়ে ভালবাসলো।সমস্যা হলো যখন গিত্তুর বাসা থেকে নিধিকে মেনে নেয়নি।গিত্তু যেদিন এই কথা জানায়, সাথে সাথে নিধি সবুজের কাছে এসে বলে, “অনেক ভালোবাসাবাসি করছো, এইবার চলো মোরা বিয়ে করি”।

সবুজ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো।এই মেয়েকে সে কখনো জানায়নি, এবং অন্য কাউকেও কখনো বলেনি যে নিধিকে সে পাগলের মত ভালোবাসে।মেয়েটা কি করে বুঝলো সে জানেনা।তারা সেদিনই বিয়ে করলো।সবুজের তখন নতুন একটা ছোটখাটো কোম্পানীতে চাকরী হয়েছে।কোনরকমে টেনেটুনে তারা একবছর পার করলো।ভালোবাসাহীন এক বছর।সেই এক বছরে নিধি প্রতিদিন কেদেছিলো গিত্তুর কথা ভেবে।গিত্তু মাঝে মাঝে সবুজের বাসায় আসতো।যখন সবুজ বাসায় থাকতোনা ঠিক তখনই আসতো।সবুজের সাথে যদি কোনভাবে গিত্তুর দেখা হয়ে যেতো গিত্তু তখন হাসিমুখে বলতো, “দোস্ত ভাবীর সাথে প্রেম করতে আসছি”।
সবুজ হাসিমুখে বলতো, “এখন বাসা থেকে বের হ।আমি এখন তোর ভাবীর সাথে প্রেম করবো”।
একদিন সবুজ যখন বাসায় আসে, তখন গিত্তু গম্ভীর হয়ে সবুজের দিকে তাকিয়ে বললো, “দোস্ত এমন একজনের সাথে কেন জীবন পার করছিস যে তোকে ভালোবাসেনা, আরেকজনকে ভালোবাসে?”
নিধিরর হাতে তখন একটা ট্রাভেল ব্যাগ গুছানো।গিত্তুর দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি একটু নিচে যাও আমি আসছি”।
নিধি কান্নাভেজা কন্ঠে তাকে বলেছিলো, “আমার মেয়েটাকে আমি রেখে যাচ্ছি তোমার কাছে।অনুগ্রহপূর্বক তুমি ওকে কখনো কষ্ট দিয়োনা”।
সবুজ শান্ত কন্ঠে বলে, “তোমার মেয়ের জন্য তোমার কষ্ট হবেনা?সাধারণ কুকুর বিড়ালেরও বোধ করি তাদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় ভালোবাসা আছে”।
এতোটা কঠিন কথা সবুজের মুখে শুনে নিধি একটু ঘাবড়ে গেলো।সবুজ নিজেই আবার বললো, “রাগ করোনা নিধি।তুমি যার জন্য এতকিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছো, একবার ভেবে দেখো কতটা সুখী হতে পারবে?”

নিধির চোখে তখন গিত্তুর আর তার ভালোবাসা, সবুজের কথা কিছুই তার মাথায় আসেনি।সে চলে গিয়েছিলো, হারিয়ে গিয়েছিলো এবং সবুজের তাতে সেদিনের পর কখনো কোন দুঃখবোধ হয়নি।
অনেকদিন পর গিত্তু সবুজকে ফোন দিয়েছিলো। তাকে ফোন করে বললো, “দোস্ত সুখী হতে পারিনাই”।
সবুজ হাসতে হাসতে বলেছিলো, “ভাবী টাইপ কাউকে ভাগায় নিয়ে কোন নির্লজ্জ সুখী হইছিলো বলে শুনিনাই”।

গিত্তু ফোন রেখে দিয়েছিলো।তারও অনেকদিন পর নিধি তাকে একটি চিঠি লিখে।চিঠিতে লিখা ছিলোঃ
“সবুজ আমি যে অপরাধ করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য এটা আমি জানি।তুমি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছিলে আমি তা আজকে বুঝতে পারি।একটাই অনুরোধ করবো, নাইমাকে তুমি কখনো বলোনা আমার কথা।কোনদিন না”।
চিঠিটা পাওয়ার পর সবুজ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেছিলো।নিধির জন্য না, তার মেয়ের জন্য।এই একটা মেয়ে তার জীবনের সবকিছু, তার একটাই কষ্ট সে মেয়েটাকে মায়ের ভালোবাসা দিতে পারেনাই।

সারমিন সবুজের কাধে ধাক্কা দিয়ে বলে, “সবুজ ভাই কোথায় হারিয়ে গেছেন?বলেন না, ভাবীকে মিস করেন এখনো?”
সবুজ কিছু বলেনা আবারও।সারমিন জিজ্ঞেস করে আবার, “ভাবীকে আপনি কি ভালোবাসছেন কখনো?ভালোবাসলে এমন হলো কেন?ভাবী প্রতিদিন আমার সাথে এসে গল্প করতো।কখনো মনে হয়নাই সে অনেক সুখী।আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন নাই কেন?”
সবুজ সারমিনের দিকে তাকিয়ে বলে, “একটা ঘটনা বলি।নিধি যেদিন আমার কাছে বিয়ের কথা বলতে আসে, তখন নাইমার বয়স এক মাস তার মায়ের পেটে।এই ব্যাপারটা সে আমাকে হাসতে হাসতে বলে।আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম কি জানো?আমি বলেছিলাম, কোন সমস্যা নাই, আমার ছেলেমেয়ের অনেক শখ।সারমিন তুমি কি তোমার উত্তর পেয়েছো?”

সারমিন কিছু না বলে সবুজের দিকে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি দিলো, তার পর নাইমার কাছে দৌড়ে গেলো।কারণ নাইমা তখন পেট চেপে ম্যা ম্যা করছে। এটা তার বাথরুম ধরেছে বুঝানোর সংকেত।

রাত দশটার দিকে যখন বাসায় ফিরল, হঠাৎ করে দেখে নাইমার গায়ে প্রচন্ড জ্বর।সবুজের মাথা ঠিক থাকেনা যখন মেয়ের কোন সমস্যা হয়। সারারাত সে মেয়ের পাশে বসে রইলো।মেয়ে কোন কথা বলেনা, কিছু খায়না।সকালবেলা সে ঠিক করলো অফিসে যাবেনা।তার কলিগ মাসুম ভাইকে ফোন করে বললো, ভাইজান আমি দুদিনের ছুটি নিতে যাচ্ছি।মেয়েটার শরীর খুব খারাপ।
মাসুম সাহেব চিন্তাযুক্ত কন্ঠে বললেন, “কোন সমস্যা নাই।দুদিন না চারদিন ছুটি নেন।বসরে আমি টাইট দিয়্যা রাখবো”।
সারমিন আজকে বাসায় নেই।নাহলে হয়তো সবুজ ওকে ডেকে আনতো নিতির জন্য।ভরদুপুরে যখন সবুজ ভাবছিলো মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে তখন হঠাৎ নাইমা চিৎকার করে কাদলো, “আব্বু আব্বু”।
সবুজ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কাদতে কাদতে বললো, “মা কি হইছে তোর?মা চল ডাক্তারের কাছে যাই”।

সবুজ অর্ধপাগলের মত রাস্তায় বের হলো মেয়েকে নিয়ে।মেয়ে কাল রাত থেকে কিছু খায়না।সকাল থেকে ১০২ জ্বর।তার মাথা তো ঠিক থাকারও কথা নয়।রাস্তায় একটা সি.এন.জিকে জোর করে আটকিয়ে শিশু হাসপাতালের দিকে রওনা দিলো।তার সমস্ত শরীর দিয়ে তখন দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে।সবুজ দরিদ্র মানুষ, তার সামর্থ্য নাই মেয়েকে নিয়ে বড় হাসপাতালে যাওয়ার।এই দুঃখে তার বুক ফেটে কান্না আসতে চায়।সে বারবার মেয়ের মুখ তার বুকে চেপে বলে, “মামণি তোর কিচ্ছু হবেনা।আব্বু আছেনা?আব্বু আছেনা?”
মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে করাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।তাও হতোনা যদিনা হাসপাতালে তার ভার্সিটির বন্ধু কিডির বউ কাকলি ডাক্তার না হত। কাকলি সবুজকে খুব কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “মেয়ের তো মনে হয় ফুড পয়জনিং হয়েছে।একটু খেয়াল রাখতে পারেন না কি খাওয়াচ্ছেন না খাওয়াচ্ছেন”।
সবুজ বললো, “ভাবী কাল রাতে চাইনীজ খেতে গিয়েছিলাম।মনে হয় সেখান থেকে কিছু হয়েছে”।

কাকলি কপালে হাত দিয়ে বললো, “আপনার মত দুষ্টু লোকদেরই আল্লাহ বাচ্চা কাচ্চা দিলো।আমি আর আপনার ফাজিল বন্ধু অনেক চেষ্টা করেও এখনো আল্লাহর সদয় দৃষ্টি পেলাম না।এটাই আফসোস।শুনেন মেয়ে ঠিক হয়ে গেলে আমি আর আপনার কাছে দিবোনা।নিধি নাই, কিভাবে না জানি আপনি ওকে মানুষ করছেন।আমি ওকে রেখে দিবো ওকে?”
সবুজ কাকলির হাত ধরে বলে, “ভাবী মেয়েটা ছাড়া আমার কেউ নাই।একটু ঠিক করে দেন”।

কাকলি চোখ মুছতে মুছতে বলে, “মেয়েটা আমারও(?!)।আর আল্লাহর কাছে যেয়ে বলেন, আমার কাছে কিছু বলবেন না।আমি কেউ না ঠিক করার”।
রাত আটটার দিকে সবুজ হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটু বিরি ধরানোর চেষ্টা করলো।এইসময় সারমিন দৌড়ায় দৌড়ায় হাসপাতালে আসলো।এসেই কাউকে কিছু না বলে ্সবুজকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার মেয়ে কই?”

সবুজ হাত দিয়ে নাইমার ওয়ার্ড দেখিয়ে দিলে সারমিন কোন কথা না বলে দৌড় দিয়ে নাইমার কাছে গেলো।সবুজও পেছন পেছন গেলো।বিরি আর টানা হলোনা।নাইমা তখন ঘুমাচ্ছে।সারমিন কিছুই কেয়ার করলোনা, সে ্নাইমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “মা তোর কি হইছে?আমার সাথে কথা বল”।
সবুজ সারমিনকে বলে, “ও ঘুমাচ্ছে।কিভাবে কথা বলবে?”
সারমিন কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি এতো খারাপ কেন?কাল থেকে এই অবস্থা, একবারও জানাতে পারলেন না?”

সবুজ কোন উত্তর খুজে পাচ্ছিলো না।একটু পর সারমিনের বাবা মা এলে সারমিন একটু স্বাভাবিক হয়ে বারান্দায় যায়। সবুজ ওর কাছে স্যরি বলতে ওর পিছু নেই।সারমিন সবুজের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে বলে, “আপনার কি মনে আছে সবুজ ভাই, কোন একদিন গভীর রাতে আমি আপনার বাসায় গিয়ে আপনাকে প্রপোজ করেছিলাম?আপনাকে কাদতে কাদতে বলেছিলাম, আমাকে বিয়ে করুন”।
সবুজ বিব্রত বোধ করলো, তার ব্যাপারটা মনে আছে।এটা আজ থেকে দু বছর আগের কথা।সে কখনো এমন কিছু চিন্তা করেনি আগে।সে সেদিন সারমিনকে বলেছিলো, “বাসায় যাও”।

সারমিন অসম্ভব কষ্ট পেয়েছিলো।একমাস বিছানায় জ্বর নিয়ে পড়ে ছিলো।এরপর যখন সবুজের সাথে দেখা হলো, সে সবুজেকে বলেছিলো, “আপনাকে ভয় দেখিয়েছিলাম।আপনি এত ভীতু?”

সারমিন তার দিকে গাঢ় চোখে তাকিয়ে বললো, “আবার বলছি আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?আপনাদের ছাড়া আমি বাচবোনা।আমার কিচ্ছু চাইনা আপনার কাছে।আমি আপনাকে কোন গালাগালি করবোনা।খোচাবোনা, বাজে বাজে কথা বলে যন্ত্রণা করবোনা।আপনি শুধু আমাকে বিয়ে করেন”।

সবুজ বিশাল যন্ত্রণায় পড়লো।সে কিছু বললোনা।পাচ মিনিট ভ্যাবলার মত সারমিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো শুধু। সারমিন কিছু না শুনে চলে গেলো নাইমার পাশে।নাইমা একটু চোখ মেলে আব্বু আব্বু করে ডাকছিলো।সবুজ পাশে যেয়ে বসল।সারমিনের বাবা আতিক সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।যাবার আগে আতিক সাহেব সবুজকে বললেন, “বাবাজী একটু বাহিরে এসেন,আপনার সাথে কথা আছে”।
সবুজ বুঝতে পারলো, তারা হয়তো তাদের মেয়ের এহেন আচরণ প্রত্যাশা করেনি।কিছু কঠিন কথা শোনার অপেক্ষায় রইলো সবুজ।
নাইমা সারমিনের কোলে যেয়ে প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলো।সবুজের আঙ্গুলগুলো ধরে সে বারবার নাড়াচ্ছিলো।ঘুম ঘুম কন্ঠে সে বলছিলো, “আব্বু বাসায় যাবো”।
সারমিন নাইমাকে জড়ায় ধরে বলে, “তোকে আমার বাসায় রেখে দিবো বুঝলি।তোর আব্বু পচা”।

সবুজ কিছু বলেনা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে, সবুজ মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে বাহিরে আসে আতিক সাহেবের সাথে কথা বলতে। আতিক সাহেব তখন তার বউয়ের হাতে বানানো পান খাচ্ছেন।সবুজকে দেখে পানের পিক ফেলে বললেন, “বাবাজী আপনি কি ঠিক করেছেন এভাবেই জীবন চালাবেন?মেয়েটার আজ যে অবস্থা দেখলাম, আপনি বোকাসোকা মানুষ এই মেয়েকে একা একা মানুষ করবেন কি করে?”

সবুজ মাথা নাড়ে। আতিক সাহেব বলেন, “আমার মেয়েটা আপনার বাচ্চাকে ছাড়া কিছু বুঝেনা।সে আজকে বাসায় কি পাগলামী করছে এটা না দেখলে বুঝানো যাবেনা।শুধু মেয়ে না, মেয়ের মাও একই রকম পাগল আপনার মেয়েটার জন্য।আমি তাই অনেক চিন্তা করে ভাবছিলাম, আপনার আপত্তি না থাকলে আমি আমার মেয়ে আর আপনাকে নিয়ে ভালো কিছু ভাবি।কি বলেন?”
সবুজ মূক হয়ে গেলো আতিক সাহেবের কথা শুনে।সে সারমিনও কিছু বলতে পারেনি, তার বাবাকেও না।

তিন বছর পর কোন একদিন নাইমাকে কোলে নিয়ে সারমিন সবুজের সামনে এসে বলে, “আমার বদ স্বামী, তুমি কি আজকের এই মহান শুক্রবারে আমাদের কোথাও ঘুরাতে নিয়ে যাবে?”
সবুজ হাসিমুখে বললো, “হুমম।জায়গা ঠিক করো”।
সারমিন মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, “নাহ আজকে বাহিরে যাবোনা।আজ বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হবে আমি দেখতে পাচ্ছি।আজ আমরা খিচুরী খাবো ডিমের ভর্তা দিয়ে।তারপর সন্ধ্যায় তুমি আমার আর আমার মেয়ের জন্য রবি ঠাকুরের গান গাইবে”।
সবুজ ঢোক গিললো।সে তার এই জীবনে শুধু নচির গান গেয়েছে।কিন্তু সারমিনের এইসব অদ্ভুত দাবী তাকে মেনে নিতে হয় সবসময়।মা মেয়ে তাকে খুব যন্ত্রণা করে কথা না শুনলে।তাই সে মাথা নাড়ে, ভালোবাসা নিয়ে।
******************************************************************
উপরের গল্পটা অর্ধেক সত্য আর Last partটা আমার কল্পনা বা আশা এরকম এ কিছু একটা।
গল্পের Heru সবুজ still now অবিবাহিত এবং সে বিড়ি দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত করে চলছে।
আর কিডির বউ Doctor না, একজন Engineer.গল্পের প্রয়োজনে এখানে তাকে Doctor বানানো হয়েছে।
আতিক সাহেব ও তার বউ দুজন ই আছে, without child. সারমিন একটি জীবন্ত character, ওর বাপ মাকে চিনিনা তাই আতিক ও তার বউকে দিয়ে কাজ চালিয়ে দিলাম।
বাচ্চা যারই হোক, সবুজের এসবের বেপারে অধিক আগ্রহ থাকায় ১ মাস আগেই বাচ্চাটাকে গল্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
শেষে যদি দেখি এমনটা হচ্ছেনা, তখন আরও একটি গল্পের সূচনা হবে, তখন আমি থাকব এইসব উদ্ভট চরিত্র গুলোর সাথে।
আপাতত এখানেই শেষ, ভাল না লাগলে কিছুই করার নাই।
*******************************************************************

1 টি মন্তব্য:

  1. নাম সংক্রান্ত জটিলতার কারনে কিডির বউয়ের নাম change করে দেয়া হল,
    গুপন সুত্রে জানা গেছে, ও এই বেপারে মহা serious,,,,,,,,,,,,

    উত্তরমুছুন